সাম্প্রতিক চীন সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—যা ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত—সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্যে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সফরকালে তিনি বলেন, “ভারতের এই সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত, অর্থাৎ ল্যান্ড লকড। তাদের সমুদ্রে প্রবেশের কোনও উপায় নেই। আর এই অঞ্চলে আমরাই সমুদ্রের দেখভাল করি—বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের গার্ডিয়ান।” ড. ইউনূসের এই বক্তব্যের পরই নড়েচড়ে বসে নয়াদিল্লি।
ড. ইউনূসের মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক মহলেও এই মন্তব্য ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ পায়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব এবং সমুদ্রপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নির্ভরশীলতা নিয়ে এই বক্তব্য দিল্লির কূটনৈতিক চিন্তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোদি সরকার একদিকে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেয়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ভার্চুয়ালি আয়োজিত ‘উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগকারী সম্মেলনে’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অংশ নেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটি শুধু ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির কেন্দ্রেই নয়, বরং এটি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। ভারতীয় উপমহাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূসের ‘বঙ্গোপসাগরের গার্ডিয়ান’ মন্তব্যটি ভারতের জন্য ছিল কৌশলগত বার্তা, যা ভারতের ওপর বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, বিনিয়োগ সম্মেলনের সময় ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়।
তবে এর পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি ঢাকা। ভারত থেকে সুতাসহ কয়েকটি পণ্য আমদানি স্থগিতের পাশাপাশি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন একতরফা নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প বাণিজ্য পথ ও কৌশল খুঁজছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার ইঙ্গিতই দিচ্ছে না, বরং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য পুনর্বিন্যাসের সূচনা করেছে। বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের ধরন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র:যুগান্তর
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক
ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইসরায়েল তাকে ‘হত্যার’ চেষ্টা করেছে
খাদ্যের জন্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করে গাজায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ-শিশুর লড়াই