ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে একযোগে ১৭০টি মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তরুণ আলেমদের সংগঠন সাধারণ আলেম সমাজ। সংগঠনটি একে ‘ধর্মীয় বিদ্বেষ’ এবং ‘রাষ্ট্রীয় উগ্র সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, হালদওয়ানি জেলায় মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্তকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উপর এক নির্মম আঘাত হিসেবে দেখা উচিত। ভারতের উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করলেও সাধারণ আলেম সমাজের মতে, এটি মুসলিমদের ধর্মীয় ও শিক্ষাগত অধিকারকে নিঃশেষ করে দেওয়ার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ।
বিবৃতিতে বলা হয়:
“এই পদক্ষেপ কেবল শিক্ষার উপর আঘাত নয়, বরং একটি গোটা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার রাষ্ট্রীয় প্রয়াস। এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভারতের সংবিধান, মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার মুখে চপেটাঘাত।”
সংগঠনটি আরও প্রশ্ন তোলে, “আমরা কল্পনা করতেই পারি, যদি বাংলাদেশে একসঙ্গে ১৭০টি মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হতো এবং সরকার তা ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করত, তাহলে আন্তর্জাতিক মহলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো? তখন জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা, এমনকি দেশীয় সুশীল সমাজের মধ্যে কি বিশাল তোলপাড় হতো না?”
ভারতে মুসলিমদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সাধারণ আলেম সমাজ জানায়:
“ভারতে গরু জবাই, হিজাব পরা, নামাজ আদায় এবং ওয়াকফ সম্পদের মালিকানা নিয়েও একের পর এক বৈষম্যমূলক আইন পাস হচ্ছে। মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সেখানে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ এসব ঘটনার কোনো জবাবদিহিতা নেই। বরং আন্তর্জাতিক মহল নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়ে গেছে।”
এছাড়াও সংগঠনটি হতাশা প্রকাশ করে জানায়, “দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, এনজিও সংশ্লিষ্টরা কিংবা তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ভারতের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে পাশ কাটিয়ে বরং বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে দেশবিরোধী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকেন। এ ধরনের দ্বিমুখী আচরণ এক ধরণের নৈতিক অবক্ষয় এবং মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে পরিচালিত ন্যারেটিভ যুদ্ধেরই অংশ।”
সংগঠনের বক্তব্যে আরও বলা হয়:
“আমরা বিশ্বাস করি, এটি কেবল ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়; বরং বৃহত্তর মুসলিম পরিচিতিকে মুছে ফেলার জন্য একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনার অংশ। আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করছি।”
সাধারণ আলেম সমাজ বিশ্বের সব মুসলিম দেশ, বিবেকবান মানুষ, আলেম, চিন্তাবিদ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে — ভারতের এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত ও মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য।
“আমরা আশা করি, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ব মুসলিম সমাজ জেগে উঠবে এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।” — এমন আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি শেষ করে সাধারণ আলেম সমাজ।
ক্ষুধায় ধুঁকছে গাজা, মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই—শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জনের মৃত্যু
গ্রেফতারি আবেদন শুনেই লন্ডন ছাড়লেন ইসরায়েলি মন্ত্রী
বাংলাদেশের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানেনি হামাস
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না