প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ রাজ্য এবং বিশ্বের বিভিন্ন শহরে গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘হ্যান্ডস অফ’ নামের এই বিক্ষোভে অংশ নেন গণতন্ত্রপন্থি লাখ লাখ মানুষ। স্থানীয় সময় গত শনিবার এই বিক্ষোভ হয়।
ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর এই প্রথম তার বিরুদ্ধে এত বড় বিক্ষোভ হলো। এ বিক্ষোভের আয়োজন করেছে গণতন্ত্রপন্থি একটি আন্দোলন। আয়োজকরা বলছেন, দেশজুড়ে পার্ক, সিটি হল, রাজ্যের রাজধানী, সরকারি ভবন, কংগ্রেসনাল অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ এক হাজার চার শতাধিক জায়গায় গণবিক্ষোভ হয়েছে।
ইন্ডিভিসিবল নামের একটি সংস্থার তথ্যমতে, ছয় লাখের বেশি মানুষ এসব বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন। যার মধ্যে কিছু বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডন ও প্যারিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে।
আয়োজকরা তাদের তিনটি দাবির কথা জানিয়েছেন। সেগুলো হলো— কোটিপতিদের দখলদারিত্ব এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক দুর্নীতির অবসান। মেডিকেড, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য কর্মজীবী মানুষের জন্য ফেডারেল তহবিল হ্রাসের অবসান ঘটানো। অভিবাসী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের অবসান।
ওয়াশিংটন ডিসির বিক্ষোভে বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা ট্রাম্প প্রশাসনের বিপক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। এর মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন জেমি রাসকিন। তিনি বলেন, ‘মুসোলিনির রাজনীতি এবং হারবার্ট হুভারের অর্থনীতির পথ অনুসরণ করা প্রেসিডেন্টের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠাতারা এমন একটি সংবিধান লিখেছিলেন, যা ‘আমরা একনায়ক’ দিয়ে শুরু হয় না। এর শুরুতে বলা হয়, ‘আমরা জনগণ’।
ট্রাম্প প্রশাসনের নিন্দা জানিয়ে ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সামনে নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করা হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর উদ্দেশে রাসকিন বলেন, কোনো নীতিবান ব্যক্তিই অর্থনীতি বিধ্বংসী একনায়ককে চায় না।
মিনেসোটার আইনপ্রণেতা ইলহান ওমর বলেন, যদি আপনি এমন একটি দেশে বিশ্বাস করেন, যেখানে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের যত্ন নিই, দরিদ্রদের দেখাশোনা করি এবং নিশ্চিত করি যে, আমাদের সন্তানদের এমন একটি ভবিষ্যৎ আছে, যার ওপর তারা বিশ্বাস করতে পারে, তাহলে আমাদের এজন্য লড়াই করতে হবে।
ফ্লোরিডার আইনপ্রণেতা ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্টও বিক্ষোভে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, মানব ইতিহাসজুড়ে কর্তৃত্ববাদীরা কখনই তাদের ক্ষমতা নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না। তাই সীমা অতিক্রম করে এবং আইন ভঙ্গ করে। এরপর তারা জনসাধারণের দিকে তাকায় যে, তারা চুপ আছে নাকি সক্রিয়।
ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তার প্রশাসন সরকারি খরচ কমানোর বিষয়ে সরব। এতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নিয়ে এ প্রশাসন মোটেও ভাবেনি।
ইতিমধ্যে ট্রাম্প ও মাস্কের ফেডারেল সরকারের আকার ছোট করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে অথবা তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুতির নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক, তথাকথিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের’ প্রধান হিসেবে ব্যয় কমানোর জন্য আগ্রাসীভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। একই সঙ্গে ফেডারেল ব্যয় সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
ট্রাম্প-মাস্ক জুটি বিদেশি সাহায্য কর্মসূচি বাতিল করেছেন, যা বিদেশে ভঙ্গুর গণতন্ত্রের দেশগুলোকে সহায়তা করত। পাশাপাশি দেশে মার্কিন নির্বাচন রক্ষাকারী ফেডারেল কর্মীদের ছুটিতে পাঠিয়েছেন। প্রায় সাত কোটি ৩০ লাখ আমেরিকানের মাসিক সুবিধার দায়িত্বে থাকা সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন এখন হাজার হাজার কর্মচারী ছাঁটাইসহ ব্যাপক পুনর্গঠনের পর অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে নিয়েছে অস্বাভাবিক ব্যবস্থা।
সম্প্রতি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে গ্রেপ্তার করা হয় ফিলিস্তিনি শরণার্থী মাহমুদ খলিলকে। তার গ্রিনকার্ড বাতিল করা হয়েছে। এরপর থেকে দেশটিতে মানুষ তাদের সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আয়োজকরা বলছেন, ট্রাম্প ও মাস্কের মতো ধনীরা যখন টাকার পাহাড় গড়ছেন, তখন আমরা তার মূল্য দিচ্ছি। এটি শুধু টাকার ব্যাপার নয়, এটি ক্ষমতার ব্যাপার। এই প্রশাসন এক শতাংশ ধনী ছাড়া বৃদ্ধ, শিশু, কৃষক, অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং বিরোধী সবাইকেই লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এর সবই করা হচ্ছে ক্ষমতা সুসংহত এবং তাদের মিত্রদের পুরস্কৃত করতে।
দেশজুড়ে এ বিক্ষোভ মূলত শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ইন্ডিয়ানার লাফায়েট শহরের কেন্দ্রস্থলে একজন ব্যক্তি তার গাড়ি থেকে একটি লম্বা বন্দুক বের করে জনতার দিকে তেড়ে যান। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং নির্দোষ হওয়ায় ছেড়েও দেয়।
ওয়াশিংটনের ওই বিক্ষোভে ফেডারেল কর্মচারী ইউনিয়নের দুই সভাপতি ফেডারেল কর্মীদের নিয়ে ট্রাম্প ও তার নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফেডারেল এমপ্লয়িজের সভাপতি র্যান্ডি এরউইন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন এ দেশের পাবলিক সার্ভিস একেবারেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা সরকারকে আরো দক্ষ করে তোলার দাবি করে। এটি একটি নিষ্ঠুর রসিকতা।
ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সভাপতি এভারেট কেলি বলেন, তারা ভেবেছিল আমরা সহজ লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু আমি বলতে চাই আমরা ভয় পাব না। আমাদের চুপ করানো যাবে না। আমরা মাথা নত করব না। আমরা উঠে দাঁড়াব।
ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প ফেডারেল কর্মবাহিনীকে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে তার প্রশাসন ইতোমধ্যে হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই করেছে। এখন পর্যন্ত ফেডারেল সংস্থাগুলো থেকে কমপক্ষে এক লাখ ২১ হাজার ৩৬১ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সূত্র: সিএনএন
ক্ষুধায় ধুঁকছে গাজা, মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই—শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জনের মৃত্যু
গ্রেফতারি আবেদন শুনেই লন্ডন ছাড়লেন ইসরায়েলি মন্ত্রী
বাংলাদেশের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানেনি হামাস
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না