বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাত্রা। এই সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে একপাক্ষিকভাবে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল। ভারতের দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ ছিল একটি "নির্ভরযোগ্য অংশীদার", বিশেষত সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের সহযোগিতা এবং ভারত-বান্ধব নীতির জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তাতে বিএনপি এবং ভারতের মধ্যে একটি নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করে আসছে। ভারতের কাছে দলের ভাবমূর্তি পুনর্নির্মাণে তারা নানা বার্তা ও পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিএনপির বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রধান অভিযোগ রয়েছে—২০০১-২০০৬ মেয়াদে ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত শত্রুতা, সীমান্তপথে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা, এবং সবচেয়ে বড় যেটি—জামায়াত-ই-ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক জোট। ভারত মনে করে, এই জোট বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তিকে ক্ষমতায় আনার দ্বার খুলে দেয় এবং একইসঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে ওঠে।
ভারতের সাবেক হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস ২০১৯ সালে স্পষ্টভাবে বলেন, ভারত বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং বারবার তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন তারা ভারতের বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। বিশেষ করে ভারতের প্রতি সদিচ্ছা এবং আস্থার বার্তা যদি দলীয় নীতির স্তরে আসে, তাহলে সম্পর্ক পুনর্গঠনের জায়গা তৈরি হতে পারে। কিন্তু বিএনপি তখনও সরাসরি এমন বার্তা দিতে পারেনি।
তবে ২০২৪ সালে রাজনীতির গতিপথ যে দিকে যাচ্ছে, তাতে বিএনপির জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। বিজেপি সরকার এখন বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক থেকেও কিছু সীমাবদ্ধতা অনুভব করছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে এখন "অপশন ওপেন রাখা"র কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে—তারা চায় বাংলাদেশের যেকোনো মূল রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গেই সম্পর্ক রাখার অবকাশ থাকুক।
এই অবস্থায় ভারতের উদ্বেগের জায়গাগুলো যদি বিএনপি সুনির্দিষ্টভাবে মোকাবিলা করতে পারে, তাহলে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ খুলে যেতে পারে। ভারতের মূল উদ্বেগ তিনটি—(১) জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা; (২) হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; এবং (৩) ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত না থাকা।
বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব যদি এই বার্তাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে—যেমন ভারতে সফররত নেতাদের মাধ্যমে কিংবা বিদেশনীতি সংক্রান্ত একটি পরিষ্কার নীতি পত্র প্রকাশ করে—তাহলে ভারতের আস্থার জায়গা পুনর্গঠিত হতে পারে।
ভারতও এখন আর ২০০৮ সালের ভারত নয়। এখন তারা কৌশলগত স্বার্থ, বাণিজ্য, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জনগণের মতামতকে ভারত এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, এবং কৌশলগতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ একটি অবস্থান নিয়ে ভারতের সঙ্গে এগোতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে একটি কার্যকর ও বিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, বিএনপির জন্য এটি একটি "উইন্ডো অফ অপারচুনিটি"—ভারতের সঙ্গে একটি ন্যূনতম বোঝাপড়ার ভিত্তি গড়ে তোলার, যাতে ভবিষ্যতে যদি তারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আসে, তাহলে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে না পড়ে।
ফয়জুল করীমের পক্ষে বরিশালে উত্তাল জনতা, মেয়র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ
কার পক্ষে প্রশাসন? একে অপরকে দুষছে এনসিপি-বিএনপি
বাংলাদেশ ভালো না থাকলে ভারতও ভালো থাকবে না’—সরাসরি বার্তা দিল জামায়াত আমির
ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার: জামায়াত আমির
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না