১৯৮২ সালে শুরু হওয়া এশিয়া কাপ হকির প্রতিটি আসরে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশের নাম শোনা যাচ্ছে না এশিয়া কাপের তালিকায়। এশিয়ান হকি ফেডারেশনের (এএইচএফ) কাপে ফাইনালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায়, বাংলাদেশের হকি দল এবারের এশিয়া কাপ হকি থেকে বাদ পড়েছে। হকি অঙ্গনে এই ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে, এবং সাবেক খেলোয়াড় ও হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কোচিং ও ফেডারেশনকে দায়ী করছেন।
জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স সরাসরি কোচ এবং ফেডারেশনকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, "জিমির মতো একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে ট্রায়ালে ডাকা হয়নি, অথচ তাঁর অভাব অনুভূত হয়েছে। দলের সঠিক নির্বাচন না হওয়ায় এমন লজ্জাজনক ফলাফল হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "ফেডারেশন ও কোচকে এই দায় নিতে হবে।"
এদিকে, সাবেক খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদ এ আদেল বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। জাকার্তায় অবস্থানরত তিনি জানান, "এবার বাংলাদেশ দল একেবারে ভালো খেলেনি। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে তারা পেছন থেকে টেনে ধরছে।" তিনি আরও যোগ করেছেন, "ফেডারেশনের কমিটি ভালো লোক হলেও, দীর্ঘদিন হকির সঙ্গে যুক্ত না থাকায় কমিটি আরও যোগ্য খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি করা উচিত ছিল।"
ফেডারেশন ৫০ জনেরও বেশি খেলোয়াড়কে ফিটনেস টেস্টের জন্য ডেকেছিল, তবে জিমিকে ডাকা হয়নি। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলেছেন, "৩২ বছরের বেশি বয়সী খেলোয়াড়দের বিবেচনা করা হচ্ছে না।" কিন্তু হকি অঙ্গন এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করেছে। অনেকেই মনে করছেন, বয়স ও ফিটনেসের মধ্যে একটি ভুল বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেহেতু জিমি এখনো অনেকের চেয়ে ফিট এবং গত দুই দশকে বাংলাদেশের হকির অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পরিচিত।
এএইচএফ কাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুবই দুর্বল ছিল। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্জিত জয়গুলোও তেমন উজ্জ্বল ছিল না। বিশেষ করে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোল পেতে বাংলাদেশকে ৩৯ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, সাবেক তারকা রফিকুল ইসলাম কামাল বাংলাদেশের খেলায় আত্মবিশ্বাসের অভাব লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, "মামুনের কোচিংয়ে এমন খেলা কখনো দেখিনি।" হকি ফেডারেশনের প্রস্তুতি সম্পর্কেও অভিযোগ রয়েছে, কারণ বাংলাদেশ দল কোনো আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেনি, যা দলের দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে কর্ণেল রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, "অন্যরা অনেক উন্নতি করেছে, আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের ট্যাকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল দিকেও উন্নতি প্রয়োজন।"
এবারের ব্যর্থতা বাংলাদেশের হকির জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে। দেশের হকি উন্নতির জন্য তাড়াতাড়ি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংগৃহিত প্রতিবেদন