ভারত সরকার বাংলাদেশি পণ্যের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত তিন মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ২১ মে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান-কে দেওয়া এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানান। চিঠিতে চলমান রপ্তানিপ্রক্রিয়ায় থাকা পণ্যগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখার দাবি তোলা হয়েছে।
হাতেম বলেন,
“স্থলবন্দরে আটকে থাকা পণ্য, কারখানায় উৎপাদনাধীন অর্ডার এবং রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় এখনই সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে অন্তত তিন মাস সময় পাওয়া গেলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে।”
ভারতের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (DGFT) গত ১৭ মে এক নির্দেশনায় জানায়, এখন থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ ছয় ধরনের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। তবে কলকাতা ও মুম্বাইয়ের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি বহাল থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে রপ্তানিকারকদের একটি বড় অংশ ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছে। অনেকের পণ্য ইতিমধ্যেই সীমান্তে আটকা পড়েছে, আবার কেউ কেউ প্রস্তুত পণ্য পাঠাতে পারছেন না। কারণ রপ্তানির সময় ব্যবসায়ীরা সাধারণত স্থলবন্দরের সময় ও খরচ ধরে অর্ডার মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।
বিকেএমইএর চিঠিতে বলা হয়েছে,
“ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শুধু বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমেই গত ১০ মাসে প্রায় ১২,৮১১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য ছিল তৈরি পোশাক।"
স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি সময় ও খরচের দিক থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি কার্যকর। ভারতের আকস্মিক নিষেধাজ্ঞা রপ্তানি ঋণপত্র (এলসি), চুক্তিভিত্তিক অর্ডার এবং সরবরাহ চেইনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
পরিস্থিতি মূল্যায়নে ১৮ মে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) এবং ২০ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি জরুরি সভা করে। সেখানে স্টেকহোল্ডাররা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন,
“আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছি না। সচিব পর্যায়ে বাংলাদেশ-ভারত একটি ফোরাম রয়েছে। সেখানেই আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যে ফোরামের বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
বিকেএমইএর মতে, এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক, পণ্য সরবরাহ এবং রপ্তানিকারকদের আন্তর্জাতিক সুনাম—সবকিছুর ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই তারা সরকারের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ আশা করছেন।
সূত্র:টিবিএস