রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জবরদখলের মাধ্যমে রাজশাহীর অন্যতম আধুনিক শপিং মল ‘থিম ওমর প্লাজা’ দখলের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ঋণ খেলাপির দায়ে শপিং মলটি নিলামে উঠার প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই ওমর ফারুক চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেটের উত্তরে অবস্থিত ‘থিম ওমর প্লাজা’ নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে থিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ওমর ফারুক চুক্তি করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ৩০ কাঠা জমির ওপর ৭ তলা পর্যন্ত শপিং মল এবং তার ওপরে ৩ তলা আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। তবে জমিটি আগে থেকেই আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা ছিল, যা গোপন রেখে চুক্তি করেছিলেন ফারুক।
চুক্তি অনুযায়ী থিম রিয়েল এস্টেটে ফারুকের অংশ ছিল ৩৫ শতাংশ, কেএম মোস্তাফিজুর রহমানের ২৫ শতাংশ এবং বাকি দু’জনের ২০ শতাংশ করে। ২০১২ সালে কাজ শুরুর কিছুদিন পরেই প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসে, কিন্তু তখন পর্যন্ত প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়ে যাওয়ায় কেউ পেছাতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে ফারুক চৌধুরী চুক্তির শর্তানুযায়ী অর্থ প্রদান না করায় প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখা থেকে ২৬ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়। এ ঋণের সহায়তায় ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
কাজ শেষ হওয়ার পর, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান ও অন্যান্য অংশীদাররা দোকান ও ফ্ল্যাট বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভবন চালুর এক বছরের মধ্যেই ফারুক চৌধুরী দলীয় পেশিশক্তি ব্যবহার করে পুরো মার্কেট দখল করে নেন। ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিয়ে ঘোষণা দেন, এটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন, এবং অন্য কোনো অংশীদারকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। প্রভাবশালী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে অন্যান্য অংশীদাররা নিরুপায় হয়ে পড়েন।
এরপর ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৯ সালে ঢাকার জেলা জজ আদালতে একটি সালিশি মামলা দায়ের করেন। তবে সে সময় ফারুক চৌধুরী আদালতে প্রভাব খাটিয়ে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ (স্টে অর্ডার) নিয়ে আসেন। সাম্প্রতিক সময়ে আদালত ওই স্থগিতাদেশ বাতিল করে মামলাটি পুনরায় সচল করার আদেশ দিয়েছেন।
প্রকল্প ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে তিনি ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। তবে ২০১৮ সালে শপিং মলটি জবরদখলের পর থেকে ফারুক চৌধুরী ঋণ পরিশোধে গাফিলতি করেন, যার ফলে বর্তমানে সুদাসলে ২১ কোটি ৫১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৬ টাকা ৫০ পয়সার খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক ইতোমধ্যে ভবনটি নিলামে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, ঋণ পরিশোধ না করায় ‘থিম ওমর প্লাজা’ অকশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, পলাতক অবস্থায় থেকেই ওমর ফারুক চৌধুরী আরজেএসসি’র (Registrar of Joint Stock Companies and Firms) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবিত করে অবৈধভাবে শেয়ারহোল্ডারদের পরিবর্তন করে নতুন একটি মালিকানাপত্র তৈরি করেন। এতে তার স্ত্রী নিগার সুলতানা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান, বড় মেয়ে নাফিজা হক চৌধুরীকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ছোট দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত করেন। অথচ কোনো লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার পরিবর্তন করতে হলে ম্যানেজিং কমিটির সম্মতি ও আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রয়োজন, যা এখানে মানা হয়নি। সবকিছুই ঘটানো হয়েছে একতরফাভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে।
ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা এসব গুরুতর অভিযোগ রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং ব্যবসায়িক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সময়ের অপেক্ষা এখন, আইনের হাত কত দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করে।
সংগৃহিত প্রতিবেদন
তিন দাবিতে রাস্তায় নামছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা
বাবা-এপিএস বিতর্কে নাম জড়াল আসিফ মাহমুদ, উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া কী?
জীবননগরে সীমান্ত পারাপারের সময় ভারতীয় নারী-ছেলেসহ ২১ জন আটক
মার্চে সড়কে ঝরেছে শতাধিক প্রাণ, নিহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ
মন্তব্য করুন
আপনার ইমেল প্রকাশ করা হবে না