৫ মে—একটি বিভীষিকাময় দিনের এক যুগ পূর্তি। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার শাপলা চত্বরে ঘটে যায় বাংলাদেশ ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়, যা ‘শাপলা চত্বরের গণহত্যা’ নামে পরিচিত। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আহ্বানে সেদিন লক্ষাধিক আলেম-ওলামা ও মাদরাসা ছাত্র ১৩ দফা দাবিতে সমবেত হন। সরকারের নির্দেশে রাতের আঁধারে চলে নৃশংস অভিযান, যাতে নিহত হন অসংখ্য নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
পটভূমি ও আন্দোলনের সূত্রপাত
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায় ঘোষণার পর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ইসলাম ও নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিসহ ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যে সারাদেশে মুসলমানদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবিতে রাজপথে নামে।
দফায় দফায় বিক্ষোভ শেষে হেফাজত ৫ মে ঢাকায় ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি দেয়। রাজধানীর প্রবেশমুখে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে হাজার হাজার আলেম-ওলামা ও ছাত্র শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন।
৫ মে রাতে গণহত্যা
সেদিন রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা চারদিক থেকে ঘিরে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হেফাজত নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
শোনা যায়, অনেকে নামাজরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন, আবার অনেককে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করে হত্যা করা হয়। পরে লাশগুলো গুম করার অভিযোগও উঠে। সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে লাশ সরিয়ে ফেলা হয় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন দাবি করে।
পরদিন দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রাণহানি
৬ মে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদে নামে আলেম-ওলামারা। পুলিশের গুলিতে নিহত হন আরও অন্তত ৩৪ জন। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জে, যেখানে ২৭ জন নিহত হন বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মিডিয়া দমন ও মামলা জর্জরিত হেফাজত
ওই রাতের অভিযান সরাসরি সম্প্রচার করছিল দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি। কিন্তু সরকার এই দুই চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢাকায় ৬৬টি এবং দেশজুড়ে প্রায় ১০০টির মতো মামলা হয়, যাতে প্রায় ৮৫ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
বিচারহীনতা ও হেফাজতের অভিযোগ
সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে মাত্র ১৩ জন নিহতের কথা বলা হলেও, হেফাজতের দাবি অনুযায়ী সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হন। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ ৬১ জন এবং ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ অন্তত ৫০ জন নিহতের কথা উল্লেখ করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
২০২4 সালের ২৬ নভেম্বর, হাসিনা সরকারের পতনের পর হেফাজতে ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, বেনজীর আহমেদসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করে।
পরে ১২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম।
আজকের প্রেক্ষাপট
হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন,
“২০১৩ সালের ৫ মে রাতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ঘুমন্ত ও নামাজরত আলেমদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এরপরও হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা এখনো প্রত্যাহার না হওয়া দুঃখজনক। সরকার এসব মামলা প্রত্যাহার না করলে তাদের খেসারত দিতে হবে।”
সূত্র:নয়াদিগন্ত
গুমের শিকার ব্যক্তিদের রোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা
উত্তরপ্রদেশে আগ্রাসন চলছে: মসজিদ-মাদ্রাসা টার্গেট করে উচ্ছেদ অভিযান
মাত্র ১৬ দিনে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ১৮৪ হামলা: এপিসিআর রিপোর্ট
ধর্মীয় বৈষম্যের প্রশ্নে উত্তাল ভারত: মোদীর বিরুদ্ধে ২৮০ মসজিদ-স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ