আমাদের জীবন ভাসমান তরীর মতো। যদি সত্য পথের হাল ধরে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে আর কিছু পথ গেলে জান্নাতের ঠিকানায় পৌঁছে যেতে পারি। আর যদি ন্যায়-নীতিহীন মনগড়া পথে এগিয়ে যাই, তাহলে বেশি দূর যেতে না যেতেই ঘূর্ণিপাকে জাহান্নামের অতল তলে ডুবে যেতে পারি।
বেলা ফুরাবার আগে শুদ্ধ জীবন চর্চায় নিবেদিত হই। অতীতের ভুলগুলো স্মরণ করে নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেতনা জাগ্রত করি।
আমরা যখন বিবেকহীনভাবে চলাফেরা করি, বল্গাহীন আনন্দে গা ভাসিয়ে দেই, মিথ্যা-প্রতারণায় মানুষদের ঠকাই, তখন কী আমাদের একবারও অনুশোচনা হয় না, একবারও কী মন হোঁচট খায় না যে, এ কাজগুলো কি অন্যায় নয়, এ কাজগুলো আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করেন কি-না, একবারও আখিরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয় মনে আসে না? ভালো আর মন্দ কী এক? ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের শাস্তি কী হবে না? অবশ্যই হবে দুনিয়ায় না হলেও পরকালে। আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা : " যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে, তার পুরস্কার সে দেখতে পাবে। আর যে আণু পরিমাণ মন্দ কাাজ করেছে, তার মন্দ পরিণতিও (কঠিন শাস্তি) সে দেখতে দেখতে পাবে। " -সূরা আয যিলযাল, আয়াত-৭,৮
নিজের মন্দ কাজের অভ্যাসগুলো বর্জন করে আমরা যেন নিজেদের শুধরে ফেলি। দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য।
আল্লাহ তা'আলার দীন বা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা আল ইসলামের প্রতিটি বিধানকে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের মতো সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করি। যা নবী, রাসূল, সাহাবা ও সৎকর্মশীল মানুষগণ যুগে যুগে শত নির্যাতন সহ্য করেও আনজাম দিয়ে গেছেন। এ দীনী দায়িত্ব পালন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের মাধ্যমে আমরা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে সার্থক করে তুলি। শুধু দুনিয়ার সুখ-সম্পদের মোহে অনন্ত জীবনের সুখের জন্য নিজের খারাপ অভ্যাসগুলো বদলে ফেলি!
অপরাধমুক্ত, নৈতিকতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা সমস্ত অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকি। নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহ তা'আলার ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য করে তুলি এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত সৎ, যোগ্য নেতৃত্বের হাতে আমাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করি। যাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মৌলিক অধিকার লাভ করে নিরাপদে বসবাস করতে পারে। আল্লাহ ছাড়া কারো গোলামি না করে স্বদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে। অন্যের লেজুড়বৃত্তি ও গোলামির মানসিকতাকে শুধরে ফেলি আমরা সবাই।
কবরজীবনকে নিরাপদ রাখার জন্য দুনিয়ার জীবনে সর্বস্তরে আল্লাহর দীন বা বিধান কায়েমের কাজে আমরা আত্মনিবেদিত থাকি।
জীবনের ভুলগুলো শুধরে ফেলে আগামী জীবনে আর গুনাহ না করার শপথ নিয়ে হৃদয়ের অশ্রু ঢেলে অতীত জীবনের গুনাহ মাফীর জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে আকুতি জানাই! আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাহ হওয়ার জন্য আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে শুধরে ফেলি!
আমরা সত্যিকার ঈমানদার মুসলিমরা দলমত নির্বিশেষে শীশাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ধরনের অন্যায়-অরাজকতার বিরুদ্ধে প্রাণান্তকর সংগ্রাম সাধনায় নিবেদিত হই। তাহলে সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূরীভূত হবে। সব ধর্মের সর্বস্তরের মানুষ সার্বিক অধিকার নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
শিক্ষা-সংস্কৃতিতে, সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বজনীন শান্তিপূর্ণ ইসলামি বিধান প্রতিষ্ঠা করে সেক্যুলার-ধর্মনিরপেক্ষ- বাদীদের অপকৌশল ও ভ্রান্তধারণার অপনোদন করা এখন সময়ের দাবি। মানবতৈরি ভ্রান্তধারণার অসারতা উপলব্ধি করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজের চিন্তা-চেতনাকে শুধরে ফেলা আমাদের অপরিহার্য কাজ।
আজকেই যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, তাহলে আমার আজকের আমলগুলো কেমন হওয়া উচিত ভেবে নিয়ে আল্লাহর বিধান ও রাসূলের আদর্শের আলোকে নিজেকে ঢেলে সাজাই। আটপৌরে জীবনের আচার-আচরণকে শুধরে ফেলি।
আমাদের সামনেই রয়েছে পরকালের অনন্ত যাত্রা। সেই যাত্রার জন্য কি আমরা কোনো পাথেয় জমা রাখি? সময়ের শেষ ঘণ্টা বাজার আগেই কি আমাদের উচিত নয়, অনন্তকালের সুখের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আমরা ব্যক্তি ও সমাজে আল্লাহর আনুগত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদিত হয়ে আল্লাহর সন্তোষকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করি। পরনির্ভরশীলতা বর্জন করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করে নেই ।
আমাদের জীবনবেলা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি নিকটতর হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা বলছেন,
" মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় ঘনিয়ে আসছে। অথচ তারা উদাসীনতায় আল্লাহ বিমুখ হয়ে আছে। " -সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত-০১।
আসুন ক্ষণস্থায়ী জীবনে আল্লাহর বিধান মোতাবেক জীবন ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সাজিয়ে তুলে নিজের জীবনকে সার্থক করে তুলি। শয়তানের কুমন্ত্রণায় পাপ-পংকিলতা ও মানবরচিত মনগড়া আইন থেকে মুক্ত থেকে নিজের ভ্রান্ত জীবনকে শুধরে নিয়ে পরিশুদ্ধ মানুষ হই।
ফিলিস্তিনসহ আজ বিশ্বমুসলিম জুড়ে মুসলমানরা ইহুদি খ্রিস্টান মুশরিকদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, মুসলমানদের আবাসস্থল, মাসজিদ, মাদরাসা, ইবাদতখানা, আদর্শিক প্রচারকেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বিশ্বের প্রায় দু'শ কোটি মুসলিম রাষ্ট্রীয় শক্তি ঐক্যবদ্ধ সামরিক প্রতিরোধ গড়ে না তুলে নিরব ভূমিকা পালন করছে। পরাশক্তিগুলোর লেজুড়বৃত্তি করছে। প্রকৃত মুসলিম আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। নিজের ঈমানীবল ও পার্থিব শক্তি সামর্থ্য নিয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তবেই আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য নেমে আসে।
আমাদের উচিত, ইহুদি খ্রিস্টান মুশরিকদের প্রতি নতজানু আচরণ ও লেজুড়বৃত্তি পরিত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি তাওয়াককুলে ঋদ্ধ হয়ে খাঁটি মুসলিম হিসেবে নিজেদের জীবনকে শুধরে ফেলা।
আসুন আমরা মাজলুম মানবতার সার্বিক মুক্তির জন্য জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজের ভীরুতা বর্জন করে আল্লাহর সৈনিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি!
লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, কবি
নিন্দার কাঁটা ও আদর্শবাদী এক্টিভিজম - ওয়াজ কুরুনী সিদ্দিকী
কা'বা দর্শণ আল্লাহর এক নিয়ামত : অধ্যাপক আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
যাকাত ও সাদাকা : দারিদ্র্য বিমোচনের মানবিক সমাধান
যাকাতের মাধ্যমেই দেশ হতে পারে স্বনির্ভর - আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন