ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা মুহুরী নদীর তীরে বিশাল বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নতুন বাঁধ নিয়ে ভারতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রাজ্য সরকার আশঙ্কা করছে, নতুন এই বাঁধের ফলে ত্রিপুরায়, বিশেষ করে দক্ষিণ ও উত্তর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রবল বন্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনার জন্য রোববার (২০ এপ্রিল) রাজ্য সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল দক্ষিণ ত্রিপুরা সফর করেছে।
দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত বন্যাপ্রবণ মুহুরী নদীর বিপরীত তীরে বাংলাদেশের নতুন বাঁধ নিয়ে ভারতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বেলোনিয়া, জেলা সদর ও আশপাশের সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি তৈরি হয়েছে। কয়েকদিন আগেই তারা স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন।
২০২৪ সালের আগস্টে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বহু নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যার প্রভাব এখনো মানুষের স্মৃতিতে বিদ্যমান। সেই অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নতুন বাঁধ নিয়ে ভারতে উদ্বেগ তাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের গণপূর্ত বিভাগের সচিব কিরণ গিত্তে দক্ষিণ ত্রিপুরায় সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা দক্ষিণ ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জেলায় ৪৩টি স্থান চিহ্নিত করেছি। যেখানে মেরামতের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বা শিগগির শুরু হবে। জুন মাসের মধ্যেই সকল কাজ সম্পন্ন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাঁধ মেরামতের কাজ ২৪ ঘণ্টা চলবে এবং কাজের পরিমাণ বেশি হওয়ায় দক্ষিণ ত্রিপুরায় অতিরিক্ত পাঁচজন প্রকৌশলী মোতায়েন করা হবে।’
এ সফরে সচিব কিরণ গিত্তের সাথে ছিলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের মহাপরিদর্শক অশ্বিনী কুমার শর্মা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলার প্রশাসনিক ও পুলিশ প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি
শনিবার (১৯ এপ্রিল) স্থানীয় সিপিআই (এম) বিধায়ক দীপঙ্কর সেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান, যাতে বাংলাদেশে বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য বন্যার হুমকি সম্পর্কে কেন্দ্রকে অবহিত করা হয় এবং বাংলাদেশের নতুন বাঁধ নিয়ে ভারতে উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া উত্তর ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার কংগ্রেস নেতারাও একই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দলটির দাবি, বাংলাদেশে নির্মিত অনুরূপ বাঁধ জেলা সদর কৈলাশহর এবং আশপাশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এই পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরতে কংগ্রেস একাধিক আন্দোলনেরও আয়োজন করেছে।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী বিরজিৎ সিনহা বলেন, ‘বাংলাদেশ একতরফাভাবে এই বাঁধ নির্মাণ করছে।’
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অবহিত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী উনাকোটি জেলায় বাংলাদেশী বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্য প্রভাব এবং ভারতের পক্ষে সম্ভাব্য বন্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঢাকার কাছে বিষয়টি তোলার আহ্বান জানান।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর দুই দেশই সীমান্তবর্তী মুহুরী নদীর তীরে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণে সম্মত হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের কথা থাকলেও বর্তমান উদ্যোগ নিয়ে ফের আলোচনা ও কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সূত্র : দ্য হিন্দু