বাংলাদেশে প্রস্তাবিত ও চলমান রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছে ভারত। প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির এ প্রকল্পগুলো বন্ধের পেছনে ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা’ ও ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’কে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি। ভারতের প্রভাবশালী অর্থনৈতিক দৈনিক দ্য হিন্দু বিজনেসলাইন–এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি বড় রেল প্রকল্প এবং পাঁচটি আলাদা স্থানে চলমান জরিপ কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারতের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর (সেভেন সিস্টার্স) মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা আপাতত থেমে গেল। এর পরিবর্তে ভারত অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক রেল পরিকল্পনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
স্থগিত হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন এবং ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ। আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পটি ভারতের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, যার মাধ্যমে আসামের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। খুলনা-মোংলা প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দর ব্রডগেজ লাইনে যুক্ত হতো, যা ভারতের জন্যও বাণিজ্যিক সুবিধা বয়ে আনতো। অন্যদিকে ঢাকা-জয়দেবপুর প্রকল্প ছিল রাজধানীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের অংশ, যার কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে এ পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ভারত এখন ভুটান ও নেপালের মধ্য দিয়ে বিকল্প রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। নেপালের বিরাটনগর থেকে নিউ মাল পর্যন্ত ১৯০ কিমি এবং গালগালিয়া-ভদ্রপুর সংযোগসহ পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে আরও কিছু নতুন রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব রুট বাস্তবায়ন কৌশলগতভাবে জটিল হলেও বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প সংযোগ নিশ্চিত করতে পারে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।
ভারতের এক রেল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো নির্মাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে না এবং যেসব প্রকল্পে অর্থায়ন চলছিল সেগুলোও স্থগিত রয়েছে। আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্লেষকদের মতে, রেল প্রকল্প স্থগিত হওয়া সাময়িকভাবে দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করলেও দীর্ঘমেয়াদে সমঝোতা ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে।
তথ্য সূত্র: দৈনিক দ্য হিন্দু বিজনেসলাইন